প্রকাশিত:
১২ জুন ২০২৩, ২০:৫৪
৬০০ কোটি টাকার সম্পদের হিস্যা বুঝে নিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই মাসের মধ্যে বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে এটি বুঝে নিতে হবে।
একই সঙ্গে রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে শত শত কোটি টাকা আদায়ের সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
সোমবার (১২ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রিটটি তিনি নিজেই করেছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর বনানীতে সিটি করপোরেশনের জমিতে ২৮ তলা ভবন নির্মাণ করে ভোগদখল করছে বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড। সেখানে পাঁচ তারকা হোটেলও করা হয়েছে।
এরপর এই অনিয়মের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রোববার (১১ জুন) সকালে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার সুমন।
তিনি বলেন, বনানীতে সিটি করপোরেশনের ৬০ কাঠা জায়গা নিয়ে ২০০৬ সালে একটি চুক্তি হয় বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের। বোরাকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নূর আলির সঙ্গে চুক্তিতে বলা হয়, বনানী কাঁচাবাজারের পশ্চিম পাশে ও বনানী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তর পাশে সিটি করপোরেশনের জমিতে ‘বনানী সুপার মার্কেট কাম হাউজিং কমপ্লেক্স’ নির্মাণ হবে। ভবনের ৩০ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন, ৭০ শতাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
ব্যারিস্টার সুমন আরও বলেন, আমার প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে যে, বনানীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এমন অসম চুক্তি কীভাবে হয়? এ চুক্তিতেই দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যায়। আর এটি নিশ্চিত হয়েছে যেভাবে তা হলো, যে ৩০ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন সে ভাগের সম্পদের মূল্য প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। কিন্তু সে হিস্যা গত এক দশকেও বুঝে পায়নি সিটি করপোরেশন। উল্টা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ১৪ তলার স্থলে ২৮ তলা ভবন নির্মাণ করে পুরোটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বোরাক।
ব্যারিস্টার সুমন জানান, ২০০৬ সালে এই চুক্তি হয়। ২০১০ সালে এটি হস্তান্তর করার কথা ছিল। সেখানে এখন ২০২৩ সাল চলে। প্রায় ১৪ বছর ধরে বোরাক রিয়েল এস্টেট শেরাটন হোটেলের মতো একটি আন্তর্জাতিক হোটেল নিয়ে এসেছে। কিন্তু একটি টাকাও এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন পায়নি।
সেসময় মেয়র ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কীভাবে এমন অসম চুক্তি করতে পারেন- প্রশ্ন তোলেন ব্যারিস্টার সুমন।
তিনি বলেন, যে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন তিনি কীভাবে একটি বেসরকারি রিয়েল এস্টেটের মালিককে রাষ্ট্রের সম্পত্তির ৭০ ভাগ মালিকানা দিয়ে দেন। এটা আমার বোধগম্য হয় না।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন তুলে ধরে সুমন বলেন, আমার মনে হয় নুরে আলমের মুখোমুখি হওয়ার মতো শক্তি আমাদের সিটি করপোরেশনের নেই।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, নতুন বাজেটে যাদের শুধু টিন আছে তাদেরও দুই হাজার টাকা কর ধার্য করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। কষ্ট করে হলেও এ টাকা আমরা হয়তো দেবো। কিন্তু সেখানে ১৪ বছর ধরে কোটি কোটি টাকা পড়ে আছে আপনারা সেখানে কিছুই বলবেন না? এ কারণে আমার মনে হয়েছে একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমার এ অভিযোগ করা উচিত।
গত ১ জুন দেশের একটি গণমাধ্যমে ‘বনানীতে ২৮তলা ভবন সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেখানে উঠে আসে কীভাবে ১৪ তলার চুক্তি করে ২৮ তলা ভবন বানিয়ে ভোগদখল করছে বোরাক রিয়েল এস্টেট।
মন্তব্য করুন: